• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

নজর এবার অনুন্নত পৌরসভায়

  • তরিকুল ইসলাম সুমন
  • প্রকাশিত ২৯ এপ্রিল ২০২৪

এবার অবহেলিত, অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ পৌরসভাগুলোর দিকে নজর দিয়েছে সরকার। দেশের ৮৮টি পৌরসভার উন্নয়ন, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘ইমপ্রুভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট (আইইউজিআইপি)’ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এসব পৌরসভার অবকাঠামো এবং সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দরিদ্র জনবসতির উন্নয়নও নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল বারেক।

প্রকল্পটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ১২০০ কোটি টাকার কাজের ১১২টি প্যাকেজ দরপত্র আহ্বান করে ৮৫০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩৫০ কোটি টাকার কাজের দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন। এছাড়াও ১২০ কোটি টাকা মূল্যের ৬টি প্যাকেজের সরঞ্জামাদি সরবরাহ চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে। অন্যদিকে এমডিএস (ম্যানেজমেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড সুপারভিশন), জিআইসিডি (গভার্নেন্স ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট) এবং আইভিএর (ইন্ডপেন্ডেন্ট ফেরিভিকেশন এজেন্সি) মতো তিনটি ক্যাটাগরির পরামর্শক সংস্থা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, দাতা সংস্থা এডিবি ও এএফডির আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো পরিকল্পিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই নগরায়ণ। প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ৬৩টি পৌরসভায় ‘ফলাফলভিত্তিক ঋণদান’ কৌশলের মাধ্যমে পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাসহ নিজস্ব দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়াও ২৫টি পৌরসভার অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমও হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির আর্থিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০২ মিলিয়ন ডলার বা ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১০০ মিলিয়ন ডলার, এডিবি ৩০২ মিলিয়ন ডলার এবং এএফডির ২০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ২০ জুন মাসে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে এবং এটি ২০২৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর অধীনে কমপক্ষে ৯০০ কিলোমিটার ড্রেন, ১৫০০ কিলোমিটার রাস্তা এবং ৭টি কমিউনিটি সুবিধাসহ জলবায়ু সহনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পাবলিক স্পেস নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প নির্মাণকাজে পৌরসভার ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে দরিদ্র জনবসতির উন্নয়নও নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পভুক্ত ৬৩টি পৌরসভা থাকলেও পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরো ২৫টি পৌরসভা যুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগে-১৭টি (ভাঙ্গা, বোয়ালমারী, গোয়ালন্দ, আড়াইহাজার, মনোহরর্দী, মুন্সীগঞ্জ, কালীগঞ্জ, মধুপুর, হোসেনপুর, কালকিনি, নড়িয়া, মানিকগঞ্জ, টুঙ্গীপাড়া, মিরকাদিম, কালিয়াকৈর, পাকুন্দিয়া এবং ভৈরব), ময়মনসিংহ বিভাগের তিনটি (মদন, নকলা এবং গফরগাঁও), চট্টগ্রাম বিভাগের ১৯টি (চন্দনাইশ, বাঁশখালী, সন্দ্বীপ, রাউজান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদগঞ্জ, মতলব, হাজীগঞ্জ, চৌমহনী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, নাজিরহাট, বসুরহাট, দাগনভুঁঞা, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি এবং সোনাহাজী), খুলনা বিভাগের সাতটি (আলমডাঙ্গা, ভেড়ামারা, কুমারখালী, কেশবপুর, গাংনী, মনিরামপুর এবং মহেশপুর), রাজশাহী বিভাগের ১০টি (ভবানীগঞ্জ, নওহাটা, বাঘা, রহনপুর, সাঁথিয়া, কেশরহাট, নজিরপুর, সারিয়াকান্দি, শিবগঞ্জ এবং চারঘাট), রংপুর বিভাগের বিভাগের তিনটি (পাটগ্রাম, উলিপুর এবং সুন্দরগঞ্জ) এবং সিলেট বিভাগের চারটি (মৌলভীবাজার, ছাতক, কুলাউড়া এবং চুনারুঘাট) পৌরসভা রয়েছে। এছাড়াও পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ আওতাভুক্ত পৌরসভাগুলো হলোÑ লক্ষ্মীপুর, লাকসাম, নবীনগর, লালমনির হাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজবাড়ী, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, মুক্তাগাছা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মেহেরপুর, মাগুরা, বেনাপোল, জয়পুরহাট, বেড়া, ঈশ^রর্দী, শাহাজাদপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, গোপালগঞ্জ, বরগুনা এবং পিরোজপুর।

প্রকল্প পরিচালক আব্দুল বারেক জানান, প্রকল্পভুক্ত এলাকায় শুধু রাস্তাই করা হবে না যে সব জায়গায় ওয়াকওয়ে প্রয়োজন সেগুলোও নির্মাণ করা হবে, পৌরসভাগুলোকে নিজেদের মতো করে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু করা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা, পৌরসভাগুলোতে জাতীয় বাজেট নির্ভরতা রোধে কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে। মূলকথা পৌরসভাগুলোর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আমাদের জানাবে, আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সকল সুবিধাদি দেব, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তারাই কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট ও সহযোগিতা দেওয়া হবে প্রকল্প থেকে। স্থানীয় পর্যায়ে কাজের টেন্ডার ও কার্যাদেশ পৌরসভাই বাস্তবায়ন করবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি এই প্রকল্পের পরিচিতিবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, দরিদ্রদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এসব দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন সুবিধার বাইরে রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকার এ জন্য কাজ করছে। সরকারের এই কাজেরই প্রতিফলন আইইউজিআইপি প্রকল্প বাস্তবায়ন।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গতবছর জাতীয় সংসদকে জানিয়ে ছিলেন, সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতায় সারা দেশের ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫২ কিলোমিটার সড়ক পাকা করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে সারা দেশে পাকা সড়কের দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৯৯ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়কের দৈর্ঘ্য ২ লাখ ১২ হাজার ৬৫৩ কিলোমিটার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads